প্রকাশিত: ১৪/০৭/২০১৮ ৭:১১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৪৬ এএম

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া::
স্বাভাবিকের তুলনায় অপ্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের (সিজার) মাধ্যমে সন্তান জন্মানোর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রচলিত আইন, স্বাস্থ্য বিশেষঞ্জদের সতর্কতা ও বিদেশি সংস্থার পরামর্শ কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না।স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশও অধিকাংশ হাসপাতালে উপেক্ষিত হচ্ছে। বাড়তি টাকা কামানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার ও কর্মকর্তা মিলে কক্সবাজারসহ পুরো বাংলাদেশে চালিয়ে যাচ্ছেন অস্ত্রোপচার বাণিজ্য। ভয়ানক এই বাণিজ্য মা ও শিশুকে ভবিষ্যতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এভাবে সন্তান জন্মানোর পর মা ও সন্তান দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্কার কথা নীতিমালা অনুযায়ী ডাক্তাররা অস্ত্রোপচারের আগে অভিভাবকদের জানাচ্ছেন না। অনেক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের আগে প্রসূতির দরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয় না। অনেক সময় ভুল করে ডাক্তাররা প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলা ও মৃত্যুর ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। ডাক্তারদের মতে, গর্ভধারণজনিত জটিলতা ও প্রসবকালে বা প্রসবের পর ৪২ দিনের মধ্যে কোনো প্রসূতির মৃত্যু হলে তাকে মাতৃমৃত্যু বলা হয়। এর পরের সময়কে হিসাবে ধরা হয় না। ৪২ দিন পর মাতৃমৃত্যুর তথ্য সরকারের কাছে থাকে না। এ হিসাবে মাতৃস্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুধু সন্তান প্রসবকেন্দ্রিক সেবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের ৪২ দিনের পরও মায়েরা অস্ত্রোপচারজনিত মৃত্যু ও ডাক্তারের ভুলের জন্য বিভিন্ন জটিলতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েন, এ বিষয়ে হিসাব করা হচ্ছে না। এ হিসাব করলে দেশে নিরাপদ মাতৃত্বের বিষয়ে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যেত। নিরাপদ মাতৃত্বে নিশ্চিতে অন্যতম বাধা ডাক্তারদের অস্ত্রোপচার বাণিজ্য বলেও জানালেন এক ভোক্তভোগী মা। ফারহানা নামের এক গৃহবধু বলেন, কক্সবাজারের এক প্রাইভেট ক্লিনিকে আমার প্রথম সন্তান সিজারে হয়েছে। পরেরটাও সিজার। সন্তান প্রসবের সময়ে আমরা নিরুপায় হয়ে হাসপাতালে যায়। তখন ডাক্তাররা আমাদের মানষিক অবস্থা বুঝে সিজারের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। আমরাও তখন নিরুপায়। এখন বুঝতেছি আমার ও আমার ছেলের মানষিক অবস্থা। সিজারে সন্তান জন্ম দেয়া কোনো মায়ের উচিত নয় বলে আমি মনে করি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও জনসচেতনতার ফলে মাতৃমৃত্যু আগের তুলনায় কমে আসার কথা বিশেষঞ্জরাও বলেন। তবে বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী এক শ্রেণির ডাক্তার ও ব্যবসায়ীর বাণিজ্যকেন্দ্রিক মানষিকতা। হাসপাতালের ডাক্তারদের ইচ্ছেমতো চলছে অস্ত্রোপচার। অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শতকরা ৯০ ভাগ অস্ত্রোপচার একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। স্বাভাবিক উপায়ে যে নারীর সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব, তারা হাসপাতালে এলে শতকরা ৯০ জনই অস্ত্রোপচারের শিকার হচ্ছেন। টাকার লোভে তাদেরকে অস্ত্রোপচারের বলি হতে হচ্ছে। ডাক্তার ও হাসপাতাল মালিকদের এ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় দিনে দিনে তা লাগামহীন হয়ে উঠেছে। সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বেশি হচ্ছে। ডাক্তার মোহাম্মদ আয়াছ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ হিসাব বলছে, দেশের সরকারি হাসপাতালে শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ শিশু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয়। বেসরকারি হাসপাতালে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় অস্ত্রোপচারে। বেসরকারি হাসপাতালে এ হার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে বলেও তিনি দাবি করেন। ডাক্তারদের সেবার মানষিকতার চেয়ে ব্যবসায়িক মনোভাবের কারণে ৮০ শতাংশ অস্ত্রোপচার হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। অনেক ডাক্তার আছেন, যারা বেসরকারি হাসপাতালের মালিকানায় রয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে, যেকোনো দেশে অস্ত্রোপচারে প্রসবের হার হওয়া উচিত ১০ থেকে ১৫ ভাগ। ২০১৬ সালের হিসাবেও এ দেশে তা ছিল শতকরা ৩১ ভাগ। দিনে দিনে পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় আমাদের দেশে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে জানা যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলে ডাক্তার ও হাসপাতাল অনেক বেশি টাকা পায়। তখন অস্ত্রোপচারের খরচ যোগ হয়। ওষুধও লাগে বেশি। প্রসূতিকে বেশি দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতির শরীরে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর আক্রমণ দেখা দেয়। তখন আরো বেশি ওষুধ লাগে, রোগীকে আরো বেশিদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। স্বাভাবিক প্রসব হলে প্রসূতিকে বড়জোর দুই থেকে তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। অসেত্রাপচারের মাধ্যমে হলে কম পক্ষে এক সপ্তাহ থাকতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশিও থাকতে হয়। এতে বাণিজ্য রমরমা হয়ে ওঠে।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বাথরুমে ফেলে যাওয়া সেই নবজাতকের ঠাঁই হল নার্স মিনারার কোলে

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাথরুম থেকে উদ্ধার হওয়া ২ দিনের ফুটফুটে নবজাতককে দত্তক নিলেন ...

ঈদগাঁওতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ইউপি নির্বাচনে কারসাজি ও দুর্বৃত্তায়ন সহ্য করা হবেনা

আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, দীর্ঘ আট বছর পর ...